বৃহস্পতিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১১

আশুগঞ্জ-আখাউড়া করিডোর : ১৮ নদী খালে বাঁধ দিয়েছে ভারতীয় কোম্পানি

আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া সীমান্ত পর্যন্ত করিডোর পেতে তিতাস নদীসহ ১৮টি ছোট নদী ও খালে বাঁধ দিয়েছে ভারতীয়রা। বাংলাদেশের কোনো সংস্থাকে এর সঙ্গে জড়ানো হয়নি। ভারী গাড়ি যাতায়াতের জন্য ভারতীয় কোম্পানি এবিসি নিজস্ব তত্ত্বাবধানে বাঁধগুলো তৈরি করেছে। রাস্তা মেরামত, ব্রিজ থাকার পরও নদী-খালে বাঁধ দিয়ে পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দেয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের কোনো সংস্থাকেই জানানো হয়নি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের একজন প্রকৌশলী বলেন, রাস্তাগুলো এ বিভাগের নিয়ন্ত্রণে। অথচ ভারতীয় ভারী যানবাহন যাতায়াত শুরুর আগে ব্রিজের পাশে নদীতে বাঁধ দেয়া হয়েছে, রাস্তায় কিছু মেরামত কাজ করা হয়েছে—এসব বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে কিছুই জানানো হয়নি। সড়ক ও জনপথ বিভাগ কিছুই জানত না। সড়ক ও জনপথ বিভাগকে সম্পূর্ণ পাশ কাটিয়ে এসব করা হয়েছে। রাস্তা থাকার পরও বিভিন্ন মোড়ে বাইপাস করা হয়েছে অথচ কেউ জানে না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভারত তাদের মালামাল পশ্চিমাঞ্চল থেকে পূর্বাঞ্চলে পৌঁছাতে করিডোর হিসেবে ব্যবহার করে বাংলাদেশকে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারতকে এ করিডোর দেয়া হয়। পশ্চিমাঞ্চল থেকে প্রথমে জাহাজে করে মালামাল নিয়ে আসা হয় আশুগঞ্জ নদীবন্দরে। সেখান থেকে সড়কপথে পৌঁছানো হয় আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে আগরতলায়। আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া সীমান্ত পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার হচ্ছে সড়কপথ। এ পথ ভারতীয় ১৪০ চাকার ভারী যানবাহন চলাচলের উপযোগী নয়। ব্রিজ ও কালভার্টগুলো এ যান ধারণের ক্ষমতা রাখে না। এজন্য ভারত নিজেই নিজের মতো করে ব্রিজ-কালভার্টের পাশে বাঁধ দিয়ে রাস্তা তৈরি করে। এতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রাণ হিসেবে পরিচিত তিতাস নদীতেও বাঁধ দিয়ে রাস্তা তৈরি করে ভারত। রাস্তার সাময়িক মেরামত ও ব্রিজ-কালভার্টের পাশে বাঁধ তৈরি করতে ভারত তাদের দেশি কোম্পানি ওটিজিএলকে দায়িত্ব দেয়। ওটিজিএল আবার ভারতীয় কোম্পানি এবিসিকে দায়িত্ব দেয় কাজ তদারকি করার। এবিসি বাংলাদেশের গালফ নামের একটি কোম্পানিকে কাজটি করার দায়িত্ব দেয়। গালফ বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে রাস্তার মেরামত ও নদী-খালে বাঁধ দেয়ার কাজটি করিয়ে নেয়। কাজ চলাকালীন পুরো তদারকি করেছে ভারতীয় কোম্পানি এবিসির লোকেরা।
আখাউড়ার সুলতানপুর থেকে সীমান্ত পর্যন্ত রাস্তার মেরামত কাজ করেছে আবদুল মোমেন লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দৈনিক আমার দেশকে বলেন, বাংলাদেশ সরকারের কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান এ কাজে জড়িত ছিল না। আবদুল মোমেন লিমিটেড গালফ থেকে কাজ পেয়েছে। গালফ পেয়েছে ভারতীয় কোম্পানি এবিসি থেকে। তিনি জানান, আরও কয়েকটি বাংলাদেশী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ভাগে মেরামত ও বাঁধ নির্মাণের কাজ করেছে। কাজের তদারকি করেছে ভারতীয় লোকজন। বাংলাদেশ সরকার বা রাষ্ট্রীয় কোনো প্রতিষ্ঠান কোনোরকমের তদারকি করতে দেখা যায়নি বলে জানান আবদুল মোমেন লিমিটেডের ওই কর্মকর্তা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন