সোমবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১১

গালফ নিউজে কুলদীপ নায়ারের প্রতিবেদন : সর্বত্র দুর্নীতি : শেখ হাসিনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে জনগণ


বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনপ্রিয়তা হারাচ্ছেন। দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। দেশের সর্বত্র দুর্নীতি এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ছে যে, বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির ভয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণে তাদের সহায়তা তুলে নেয়ার হুমকি দিয়েছে।
ভারতের প্রখ্যাত সাংবাদিক কুলদীপ নায়ার সংযুক্ত আরব আমিরাতের দৈনিক গালফ নিউজে লেখা এক প্রতিবেদনে কথা বলেছেন। সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশ সফর করে গেছেন।
প্রতিবেদনে তিনি লেখেন, বাংলাদেশে পাঁচ দিন থাকার পর আমার মনে হয়েছে, হাসিনা শুধু যে তার কারিশমাই হারিয়েছেন তা নয়, একসময় তিনি যাদের বিশ্বাস করতেন, তাদেরও হারিয়েছেন তিনি।
তিস্তার পানি চুক্তি এবং টিপাইমুখ বাঁধ ইস্যু আগামী নির্বাচনে নিঃসন্দেহে প্রভাব ফেলবে বলে অভিমত দিয়েছেন সাংবাদিক কুলদীপ নায়ার।
বাংলাদেশ-ভারত বর্তমান সম্পর্ক এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যক্রম নিয়ে দৈনিক গালফ নিউজকে দেয়া সাক্ষাত্কারে কুলদীপ নায়ার বলেন, জনপ্রিয়তা একটা দুর্লভ ব্যাপার। প্রয়োজনের সময় শাসকরা জনপ্রিয়তা পান না। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষেত্রেও এমনটি হয়েছে। যখন তার জনপ্রিয়তা আসলেই দরকার, তখন তিনি তা হারাচ্ছেন। বিপুলসংখ্যক মানুষ তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। অপশাসন না হলেও সুশাসনের অভাবে বাংলাদেশের মানুষের জীবন শুধু দুর্বিষহই হয়ে উঠছে। আর ক্ষমতায় বসার তিন বছর পার হওয়ার পরও তিনি তা বুঝতে পারছেন না। জনগণ তার কাছ থেকে অনেক কিছু আশা করেছিল। কিন্তু বলার মতো কোনো উল্লেখযোগ্য কাজ জনগণ দেখতে পাচ্ছে না। উদাহরণ হিসেবে তিনি বিদ্যুত্ খাতের কথা উল্লেখ করেন।
নায়ার বলেন, স্বল্প সম্পদ দিয়ে দারিদ্র্য হ্রাস করা সব সময়ই চ্যালেঞ্জের বিষয়, কিন্তু তিনি (প্রধানমন্ত্রী) এই বাস্তবতা মানতে নারাজ। তিনি যা করছেন, তা নিয়ে তাকে বেশ সন্তুষ্ট দেখাচ্ছে। তিনি একপক্ষীয়ভাবে ভারতের সঙ্গে ট্রানজিট বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছেন।
তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যার জায়গাটি হলো, তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি। বাংলাদেশ সরকার মনে করছে, নয়াদিল্লি এবং কলকাতার মধ্যকার রাজনৈতিক টানাপড়েনের কারণে চুক্তিটি হচ্ছে না।
তবে ভারতের মনিপুরের বরাক নদীর ওপরে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প যখন সামনে এলো তখন ওই বিষয়টি আবারও পেছনে চলে গেল। মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের এক মাস পর ২৩ অক্টোবর মনিপুর সরকার এবং নয়াদিল্লির সঙ্গে এই চুক্তিটি হয়। আর এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশ বাস্তবিক অর্থেই আঘাত পেয়েছে। কারণ এই চুক্তির ফলে প্রমাণ হয়, নয়াদিল্লি বাংলাদেশের সুবিধা-অসুবিধার কথা ভাবছে না।
নায়ার বলেন, চুক্তির বাহাত্তর ঘণ্টা পর বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয়া হয় ভারত সরকারের পক্ষ থেকে। তাতে বলা হয়, এই বাঁধ শুধু বন্যা মোকাবিলার জন্য, নদীর পানি অন্যদিকে প্রবাহিত করার জন্য নয়। আর এই বক্তব্য বাংলাদেশীদের উদ্বেগ প্রশমিত করতে পারেনি। এই বাঁধটি বিশাল একটি অঞ্চলের প্রাকৃতিক বিপর্যয় ডেকে আনবে এবং বনাঞ্চল ধ্বংস করে দেবে। মোট বাহান্নটি নদী ভারত থেকে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে আসে। আমার মনে হয়, নয়াদিল্লির উচিত অন্তত এই বিষয়ে ঢাকার সঙ্গে স্বচ্ছ আলোচনায় যাওয়া।
ভারতের এই পদক্ষেপে কোণঠাসা হাসিনার মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে। ভারতের সঙ্গে হাসিনার বন্ধুত্বের চেষ্টা উপেক্ষিত হয়েছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই, দুই বছর পর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে তিস্তা এবং টিপাইমুখ ইস্যু হাসিনার ভোট কমিয়ে দেবে। আর এতে লাভবান হবেন খালেদা জিয়া।
নায়ার বলেন, দেশে সেনা অভ্যুত্থান (ক্যু) হওয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে। তিন বছর আগের সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় ছিল। সে সময় তারা চাইলেই প্রশাসন ভেঙে দিতে এবং দুই নেতার বিকল্প দাঁড় করাতে পারত।
প্রখ্যাত এই সাংবাদিক বলেন, বাংলাদেশ এবং ভারতের সম্পর্ক একটা খড়ের ওপর দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে বাংলাদেশের মানুষ স্রেফ ঝুলে আছে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের কোনো ভবিষ্যত্ আছে কিনা সে বিষয়ে তারা আজ উদ্বিগ্ন। অপরদিকে চীন বাংলাদেশের সুখ-দুঃখের অংশীদার হতে চাইছে।
নায়ার বলেন, ভারতের মতো বাংলাদেশেও দুর্নীতির দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের সর্বত্র দুর্নীতি এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে, বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির ভয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণে তাদের সহায়তা তুলে নেয়ার হুমকি দিয়েছে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা বাস্তবতাকে অনেকটাই ঢেকে রেখেছে, যার কারণে তিনি বিষয়টি নিয়ে অতটা চিন্তিত নন। তিনি বিশ্বাস করেন, কিছু সংবাদপত্র তার সুনাম নষ্ট করছে। কিন্তু তিনি বুঝতে পারছেন না, ওই সংবাদপত্রগুলোর বিক্রয়সংখ্যা তাদের গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ। তারা যদি সঠিক এবং সত্য সংবাদ না ছাপাত তাহলে তারা শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র হতে পারত না

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন