সোমবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১১

ঘরের ব্যর্থতায় ম্লান বাইরের সাফল্য?

আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করে মার্কিনিদের বিপুল বাহবা পেয়েছেন ওবামা। গত সপ্তাহে বড় দুটি সাফল্য জমা হয়েছে ওবামার ঝুড়িতে। একজন মার্কিন সেনারও রক্ত না ঝরিয়ে আফ্রিকার রাজাদের রাজা খ্যাত মুয়াম্মার গাদ্দাফি যুগের চূড়ান্ত পতন ঘটেছে। আর এ তো সেদিন হোয়াইট হাউসে জোর গলায় ওবামা ঘোষণা দিয়েছেন, চলতি বছরের শেষ নাগাদই ইরাক থেকে সব মার্কিন সেনা মাথা উঁচু করে দেশে ফিরবেন।
দেশে ওবামার লেজে-গোবরে অবস্থা। অর্থনীতির অবস্থা নাজুক। চাকরির বাজারেও চলছে খরা। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ওবামার দক্ষতা নিয়ে হচ্ছে বিস্তর সমালোচনা। এই প্রেক্ষাপটে বহির্বিশ্বে ওবামা প্রশাসনের সাম্প্রতিক সামরিক কিংবা পররাষ্ট্রনীতি-সংশ্লিষ্ট সাফল্য তাঁর সমর্থকদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। তারা ভাবছে, বহির্বিশ্বের এ সাফল্যকে পুঁজি করে আগামী নির্বাচনে সহজেই পার পাবেন ওবামা।
ওবামা-সমর্থক ডেমোক্র্যাটরা যুক্তি খুঁজে পায়, বুশের ইরাক যুদ্ধের কারণে অনেক মার্কিন সেনা হতাহত হয়েছে। অথচ দক্ষ ওবামা কোনো রক্তপাত ছাড়াই গাদ্দাফির পতন ঘটিয়েছেন। আগামী নির্বাচনে এটা রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ওবামাকে শক্তিশালী করবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ওসামা ও গাদ্দাফির মৃত্যু এবং ইরাক থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা অবশ্যই ওবামার জন্য সফলতা। তাঁদের মতে, নির্বাচনী প্রচার ও বিতর্কে এ বিষয়টিকেই হয়তো গুরুত্ব দেবেন ওবামা। তিনি ইরাক যুদ্ধের ক্ষতির সঙ্গে লিবিয়া যুদ্ধেরও তুলনা করবেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এ সাফল্য ওবামার রাজনৈতিক ভবিষ্যেত কোনো অবদান রাখবে না। মার্কিন অর্থনীতির গতি-প্রকৃতিই নির্ধারণ করে দেবে ওবামার ভাগ্য।
এ প্রসঙ্গে রিপাবলিকান দলের কৌশলবিদ ডেভিড উইন্সটন বলেন, ‘পররাষ্ট্রসংক্রান্ত বিষয়াবলি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কর্মসংস্থান ও অর্থনীতির বিপরীতে যখন তা দাঁড় করানো হবে, সেটা মামুলি বিষয় হয়ে উঠবে।’
বুশ প্রশাসনের সাবেক কৌশলবিদ কার্ল রোভ বলেন, ‘ওবামা যদি মনে করেন, তিনি পররাষ্ট্রনীতির সাফল্যের জোরে পার পাবেন, এর অর্থ তিনি প্রধান বিষয়গুলোকে এড়িয়ে যাচ্ছেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থার গুরুত্ব সম্পর্কে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ ডেভিড রথকপ বলেন, ‘যদি আগামী এক বা দুই বছর পরিস্থিতি নিম্নমুখী হয়, তবে সামরিক সাফল্য ওবামার কোনো কাজে আসবে না।’
বিশ্লেষকদের মতে, পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে ওবামা সফল হলেও অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বেকারত্ব লাঘবে ওবামা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনে এটাই তাঁর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। তবে ওবামার সমর্থকেরা মনে করছে, আগামী নির্বাচনের আগেই এ দুর্বল দিকটিও সবল হয়ে উঠবে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস অবলম্বনে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন