শনিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১১

উৎপাদনের উপায়ের মালিকানাই গণতান্ত্রিক চেতনার ভিত্তি

গণতান্ত্রিক চেতনা বিকাশের লক্ষ্যে আমরা মুক্তিআন্দোলনের কর্মীরা যখন বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকান্ড শুরু করি, তখনই উপলব্ধি করি, গণতান্ত্রিক চেতনা বিকাশের কাজ শহরে বসে শুধু বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে করলে অভীষ্ট লক্ষ্য বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। কারণ গনতান্ত্রিক চেতনা বিরাজ করে আমাদের গ্রামীণ জনসমাজে উৎপাদক শ্রেণীর মধ্যে, উৎপাদন-উৎপাদন সম্পর্কের ভিত্তিতে। এই ভিত্তি ভাঙার প্রয়াস চলেছে ঔপনিবেশিক শাসনের কাল থেকে। গণতান্ত্রিক চেতনা আজ এক বিকৃত চেতনায় পর্যবসিত হয়েছে। তথাপিও এখন পর্যন্ত সেই গণতান্ত্রিক চেতনার রেশ বিদ্যমান রয়েছে আমাদের গ্রামীণসমাজেই। আর সে কারণেই আজ এই চেতনা বিকাশ অথবা ফিরিয়ে আনার প্রয়োজন যতটা না শহুরে মধ্যবিত্ত বুদ্ধিজীবীদের ভেতর তার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণভাবে প্রয়োজন দেশের সাধারণ গ্রামীণ উৎপাদক মানুষের মধ্যে। কেননা এই বিশাল জনগোষ্ঠীই আমাদের সমাজের চিরকালের চালিকা শক্তি।
কিন্তু সাধারণ জনগণের এই চেতনার বিকাশ কেবলমাত্র সভা-সেমিনার, তত্ত্বচর্চা বা বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে সম্ভব নয়। তাই আমরা উপলব্ধি করি, জনগণের মধ্যে এই প্রয়াস চালাতে হলে গ্রহণ করতে হবে বাস্তব কর্মকান্ড। আর জনগণের চেতনার বিকাশ বা সচেতনতা বৃদ্ধির বিষয়টি তাদের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-চিকিৎসা-শিক্ষা এই পাঁচটি মৌলিক অধিকার ও জীবন-জীবিকার বাইরে কোনো বিমূর্ত বিষয় নয়।
জনগণের বাস্তব কর্মকান্ডের প্রধান বিষয় হলো উৎপাদন। এর সাথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো উৎপাদনের উপায়ের (উপকরণের) মালিকানার বিষয়। এটা হলো জনগণের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিষয়। আমাদের মনে রাখতে হবে উৎপাদনের উপায়ের মালিকানাই গণতান্ত্রিক চেতনার ভিত্তি।
বলা হয়ে থাকে জনগণের নিরাপত্তার কথা Ñ যেমন খাদ্যনিরাপত্তার কথা। এই খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার অর্থ বহুজাতিক কোম্পানির শৃঙ্খলে আবদ্ধ থেকে কোম্পানির ঋণের টাকা দিয়ে বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানি করে জনগণকে খাইয়ে-পরিয়ে বাঁচিয়ে রাখার আত্মঘাতি প্রচেষ্টা নয়। জনগণের খাদ্যনিরাপত্তার অর্থ জনগণের খাদ্যসার্বভৌমত্ব। আর এই খাদ্যসার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করার প্রধান ও একমাত্র শর্ত হচ্ছে উৎপাদনের উপায়ের (উপকরণের) ওপর জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করা।
বাংলাদেশের অবস্থা হচ্ছে, সাম্রাজ্যবাদী বহুজাতিক কোম্পানির শৃঙ্খলে আবদ্ধ দেশের সরকার ও এনজিওগুলো শুধু জনগণের খাদ্যনিরাপত্তার কথা বলে, দারিদ্র্যবিমোচনের কথা বলে Ñ কিন্তু তারা খাদ্যসার্বভৌমত্বের কথা বলে না।
তাই জনগণের খাদ্য ও জীবন-জীবিকার সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জনগণকে উৎপাদনের উপায়ের মালিক হতে সহযোগিতা করার জন্যই মুক্তিআন্দোলনের উদ্যোগে এই ছাগল প্রদানের প্রতীকি কর্মসূচি। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন সকল স্তরের মানুষের, বিশেষকরে বিত্তবান মানুষদের আন্তরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতার।
আমাদের দেশের হাজার বছরের সংস্কৃতি হচ্ছে পরস্পর পরস্পরের প্রতি সহমর্মিতা। এই ঐতিহ্য এখনো এ দেশের মানুষের মধ্যে রয়েছে Ñ এর বাস্তব প্রমাণ আমরা এই প্রাথমিক কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পেয়েছি। আমরা আশাবাদী।

রইসউদ্দিন আরিফ
আহ্বায়ক
মুক্তিআন্দোলন বাংলাদেশ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন