শনিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১১

নবীর শিক্ষা করোনা ভিক্ষা মেহনত করো সবে

‘মানুষ’ এক অপার সম্ভাবনার নাম  সে তার স্বপ্ন ও আশার সমান বড়। অসাধ্য সাধন করার ক্ষমতা একমাত্র মানুষেরই। মানুষই পারে আসমান ও জমিনের সীমা অতিক্রম করতে। সে জন্য দরকার শক্তি। সে শক্তির নাম ইচ্ছাশক্তি। এ বোধটুকু জাগ্রত হয়ে সর্বক্ষণ জাগরুক থাকার মধ্যেই ‘মানুষ’ নামের স্বার্থকতা।
মুক্তিআন্দোলন মানুষের মাঝে মানুষ হওয়ার চেতনা জাগানোর ঐতিহাসিক দায়িত্ব স্বেচ্ছা প্রণোদিত হয়েই কাঁধে নিয়েছে। যা তার জীবনবোধের শিক্ষায় দায়িত্ব ও কর্তব্যের অংশ।
আপনারা যারা ছাগল পালনের আগ্রহ পোষণ করে এখানে এসেছেন, আপনাদের মনে রাখতে হবে, এটা কোনো দান-অনুদান নয় বা ভিক্ষাও নয়। এই প্রতীকি কর্মসূচির মাধ্যমে আপনারা স্বাবলম্বী হওয়ার শপথ নিবেন। এই একটি ছাগল দিয়ে একটি গাভীর মালিক হওয়ার স্বপ্ন দেখবেন এবং সেটা অবশ্যই সম্ভব।
মুক্তিআন্দোলন সম্পদে সকলের মালিকানায় বিশ্বাসী। আর ‘হক’ বা অধিকার সবসময় কেড়ে নিতে হয় ভিক্ষার হাত পেতে নয়। ‘হক’ বা অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে লড়াই করা সবার সামাজিক দায়িত্ব। একটি পচা বা নষ্ট সমাজ ভেঙে একটি কল্যাণকর সুখী সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে এ লড়াই বিকল্পহীন। পচা বা নষ্ট সমাজের বর্ণনা দিয়েছেন হযরত আলী (রা:)।  বলছেনে, পচা বা নষ্ট সমাজে  (১) অভাবীরা ধৈর্য্যহারা হয় (২) ধনীরা কৃপণ হয় (৩) মূর্খরা মঞ্চ দখল করে হাসে (৪) জ্ঞানীরা পালিয়ে বাঁচে এবং (৫) শাসকরা মিথ্যা কথা বলে। অতএব সামাজিক মুক্তি তথা সার্বিক মুক্তির জন্য সমাজে যার যে অবস্থান তা অনুধাবন করে সে সম্পর্কে সচেতন হয়ে সঠিক ভূমিকা পালন করা সবার জন্যই জরুরি। আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অধিকারবঞ্চিত নিরস্ত্র মানুষের সাম্প্রতিক ভূখামিছিল যেন সেই মুক্তির মিছিল, যার ঢেউ এখন সবখানে। সেখানকার জাগ্রতজনতা গগনবিদারী আওয়াজ তুলছে নতুন সমাজ চাই, মানুষের পৃথিবী চাই।
মনে রাখতে হবে, না খেয়ে মরার চেয়ে গুলি খেয়ে মরাই শ্রেয়। কেননা, প্রয়োজনাতিরিক্ত সম্পদ বা খাদ্যদ্রব্য জমা করে অন্যকে অভুক্ত রাখার শিক্ষা নীতিনৈতিকাবিরোধী, ধর্মবিরোধী, ইসলামীবিরোধী তো বটেই। এ ধরনের জঘন্য অপরাধ প্রকৃতিরও ভারসাম্য নষ্ট করে। এ জন্য নবী-রসূল-পয়গম্বরদের জীবনই আমাদের উত্তম আদর্শ। ইসলামের মহান নবী হযরত মহম্মদ (স:) ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য ২৭টি যুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন। আবার তিনি মদীনার আনসার ও মক্কার মুহাজেরদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা নজীরবিহীন। মুহাজেররা আনসারদের সাথে তাদের সমস্ত সম্পদ আপন সহোদর ভাইয়ের মতো সমানভাবে বন্টন করেছিলেন। এরই নাম আদর্শিক সম্পর্ক। আমরা আমাদের মাঝে এমনই আদর্শিক সম্পর্ক সৃষ্টি করে সামাজিক কল্যাণ, শান্তি ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে চাই।
আমরা সবাই বাঁচতে চাই। বাঁচার লড়াই-ই রাজনীতি। আমরা সুন্দরভাবে বাঁচার রসদটুকু এ সমাজ থেকেই গ্রহণ করবো। এ জন্য আমরা পারস্পরিক সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেয়ার কালচার রপ্ত করার মানসিকতায় বিশ্বাসী, যা মানুষের স্বভাবধর্ম। আমাদের লোকধর্মের এ ঐতিহ্য ভিক্ষাবৃত্তি বা এনজিও ব্যবসা বিনাশে সক্ষমই নয় শুধু, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন জাতি গঠনের কার্যকর সোপানও নিঃসন্দেহে।
মুক্তিআন্দোলন মানুষের চেতনার জায়গা সমৃদ্ধ করতে সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, ওয়ার্কশপ প্রভৃতি করে থাকে। মুক্তিআন্দোলন স্বাবলম্বী হওয়ার সাধনায় প্রয়োগিক দিককে খুবই গুরুত্ব দেয়। আমাদের প্রতীকি ছাগলদান কর্মসূচি তারই বহিঃপ্রকাশ। আমরা মানুষকে রাজনীতিক সচেতন করে স্বাবলম্বী দেখতে চাই। যারা তাদের নিজস্ব চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারনা ও দৃষ্টিভঙ্গিতেও স্বাধীন ও স্বাবলম্বী হবে। মনে রাখতে হবে, চিন্তা জগতে পরাধীনতার শৃঙ্খল থাকলে স্বাধীনতা ফাঁকা বুলিতে পরিণত হয়। এ জন্য আমরা বলি, স্ব-ভাবে স্বাধীন এবং অ-ভাবে অধীন। অর্থাৎ যার নিজস্ব ভাব আছে সে-ই স্বাধীন এবং যার তা নেই সে অন্যের অধীন।
আমাদের বিশ্বাস, এভাবে নিজে জেগে অন্যকে জাগানোর কর্ম প্রক্রিয়ায় মুক্তিআন্দোলন দেশ হতে দেশান্তর ছাড়িয়ে বিশ্বময় দীপশিখা হয়ে জ্বলবে। আমাদের ভাব, ভাষা ও কর্মের সমন্বিত জীবনচর্চায় যারাই আমাদের সহযোগী ও সহযাত্রী তাদের সবাইকে নিয়েই এ কন্টকাকীর্ণ অমসৃণ চলার পথ মসৃণ থেকে মসৃণতর হবে, এ-ই আমাদের আকাক্সক্ষা। আমরা কেবলমাত্র আমাদের এই সম্প্রীতির সম্পর্ক আরও বি¯তৃত ও সম্প্রসারিত করে চলবো এবং ঐক্যবদ্ধ মেহনত করেই আমাদের পরিবর্তন ঘটাবো সার্বিক মুক্তির লক্ষ্যে।

রুহুল আমিন
সদস্যসচিব
মুক্তিআন্দোলন বাংলাদেশ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন