শনিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১১

উৎপাদনের উপায়ের মালিক হতে মুক্তিআন্দোলনের প্রতীকি কর্মসূচি

মুক্তিআন্দোলনের উদ্যোগে ৬০টি গরীব পরিবারের মধ্যে নিঃস্বার্থ ছাগলদান কর্মসূচি পালন

যশোরের দু’টি গ্রামে ৬০টি গরীব পরিবারে ছাগল প্রদানের মধ্য দিয়ে মুক্তিআন্দোলন বাংলাদেশে উৎপাদনে ধর্মের বৈজ্ঞানিক প্রয়োগের পরীক্ষামূলক কর্মসূচি পালন করেছে। মুক্তিআন্দোলন মনে করে, বিজ্ঞানেরও অপপ্রয়োগ আছে; আজ বিজ্ঞানের উপর সওয়ার হয়েই দুনিয়ার লক্ষ-কোটি মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। ধ্বংস করা হয়েছে ও হচ্ছে আমাদের ধরিত্রীর পরিবেশ, তা বলে আমরা তো বিজ্ঞানকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়নি। তদ্রƒপ ধর্মেরও অপপ্রয়োগ আছে সমাজে Ñ সে বলে আমরা ধর্মকেই কেন ত্যাগ করবো? আজ দুনিয়াব্যাপী বিজ্ঞানের সঠিক ব্যবহারের জন্য মানুষের যেমন আকুতি আমরা লক্ষ করছি তেমনি ধর্মের যথাযথ প্রয়োগে আমাদের কেন সম্মিলিত প্রয়াস থাকবে না? আমরা মনে করি মুক্তিআন্দোলন বাংলাদেশ মহাবিজ্ঞানময় প্রাকৃতিক নিদর্শন থেকে শিক্ষা নিয়ে ধর্মের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে এ সমাজকে যৌক্তিক পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে কামিয়াব হবে।
মুক্তিআন্দোলনের নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, মানুষের এই জীবনের লালিত আকাক্সক্ষা হলো সম্পত্তিতে মালিকানা প্রতিষ্ঠার। কেননা মানব জাতির সভ্যতার ইতিহাস হলো সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদের ইতিহাস। সভ্যতার এহেন অবস্থায় মানব জাতির আজ যা কিছু করার আছে তাহলো সর্বাগ্রে সম্পত্তিতে তার অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু তারও পূর্বে বিচার্য, মানুষ কিভাবে সম্পত্তি থেকে বিতাড়িত হলো। উত্তর সেখানেই; একই ভাবেই তাকেও তার মালিকানা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। কিন্তু এই খন্ডকালিন উত্তরণকালে আমাদের কি করার আছে? এই অভাবি, দরিদ্র, বঞ্চিত, লাঞ্ছিত মানুষের তাৎক্ষণিক চাহিদা পূরণে কি করার আছে? এখানেই এই সভ্যতার মহিমান্বিত (!) দাওয়াই হলো ‘ঋণ’, সে ম্যাক্রোই হোক আর মাইক্রোই হোক কিন্তু এই ঋণ কি চূড়ান্ত বিচারে সংকট সমাধানে সক্ষম? না। বরং এই ঋণের অন্তঃস্রোত ‘সুদ’ই ব্যক্তিকে ভূমি থেকে উচ্ছেদের আসল নিয়ামক কারণ। এহেন অবস্থায় সুদ ভিন্ন সাহায্যের বিকল্প ব্যবস্থা আমাদের দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় চেতনা, ঐতিহ্য ও বিধিবিধানের মধ্যেই রয়েছে যেমনÑ যাকাত, ফিতরা, কোরবানি, আকিকা, চল্লিশা প্রভৃতি। অপর দিকে আমাদের সামাজিক সংস্কৃতি Ñ জন্মদিন, মুখে ভাত, মুসলমানি, বিবাহবার্ষিকী, আনন্দময় ঘটনা যেমনÑ পরীক্ষায় ভাল ফল করা প্রভৃতিতে যে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড আছে তাকে যদি পরিকল্পিতভাবে প্রয়োগ করতে পারি তবে অবশ্যই আমাদের এ খণ্ডকালিন উত্তরণপর্ব অতিক্রম করা সম্ভব হবে।
গত ১৭ ডিসেম্বর ২০১০ যশোর সদরের আরবপুর ইউনিয়নের সুজলপুর গ্রামের আদর্শ সুজলপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সকাল দশটায় ও পাকদিয়া গ্রামের সার্বজনিন মন্দির প্রাঙ্গণে দুপুর দেড়টায় অনুষ্ঠিত ছাগলদান কর্মসূচি পালনকালে নেতৃবৃন্দ এ সব কথা বলেন।
সকাল ১০টায় আদর্শ সুজলপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় গ্রামবাসী আনোয়ার হোসেন ভান্ডারী। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেখ রবিউল আলম, সাধারণ সম্পাদক যশোর ইনস্টিটিউটস। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রেসক্লাব যশোরের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক প্রভাতফেরীর সম্পাদক ফকির শওকত, মুক্তিআন্দোলন বাংলাদেশ-এর আহ্বায়ক রইসউদ্দিন আরিফ, সদস্যসচিব রুহুল আমিন, মুখপাত্র বেনজীন খান, আদর্শ সুজলপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূরই মুহাম্মদ, স্কুল কমিটির সভাপতি মো: নুরুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মো: ফিরোজ আলী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব লুৎফর রহমান প্রমুখ।
অন্যদিকে পাকদিয়া মন্দির প্রাঙ্গণে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় গ্রামবাসী অনিমা রানী। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন একরাম উদ-দৌলা সভাপতি, প্রেসক্লাব যশোর ও মুক্তিআন্দোলনের নেতৃবৃন্দ।
সুজলপুর স্কুল মাঠে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় শেখ রবিউল আলম বলেন, মুক্তিআন্দোলনের এ ধরনের কর্মসূচি আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি অভিভূত। আমি বিশ্বাস করি আমার মত এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত আপনারাও অভিভূত। এটি একটি মহৎ ও বাস্তবউপযোগী পদক্ষেপ। এ ধরনের উদ্যোগ আমাদের এই বন্ধ্যা সমাজকে বদলে দিতে সহায়ক হবে। তবে সতর্ক থাকতে হবে, কেননা এই কর্মসূচি দীর্ঘদিন ধরে সমাজে জেঁকে বসা সুদখোর, দাদন ব্যবসায়ীদের রোষানলে পড়বে এবং আমার বিশ্বাস জনগণ তা রুখে দেবে।
পাকদিয়া মন্দির প্রাঙ্গণে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি একরাম উদ-দৌলা মুক্তিআন্দোলনকে ক্ষুদ্র ঋণের শোষণ-নীপিড়নে জর্জরিত অসহায় নারীদের ত্রাণকর্তা অভিহিত করে বলেন, এ ধরনের কর্মসূচিতে গ্রামের নারীরা স্বাবলম্বী হবে, সাধারণ মানুষ সুদখোর মহাজনদের ভয়াল থাবা থেকে বাঁচার পথ পাবে, জাতি পরনির্ভরশীলতামুক্ত হবে বিদেশী এনজিওর করাল গ্রাস ছিন্ন করে। তিনি মুক্তিআন্দোলন দেশি জাতের ফলজ গাছ সরবরাহ করার প্রতিশ্র“তি দিয়ে বলেন, স্থানীয় কৃষি ও বন বিভাগ থেকে যত আম গাছ ও কাঁঠাল গাছ দরকার তা তার নিজ উদ্যোগে পৌঁছে দেবেন।
প্রেসক্লাব যশোরের সাবেক সভাপতি ফকির শওকত মুক্তিআন্দোলনের এই প্রতীকি ছাগলদান কর্মসূচিকে যুগান্তকারী উল্লেখ করে বলেন, এ মহৎ কর্মসূচি সত্যিকারার্থেই দিকনির্দেশনামূলক মডেল, যা শুধু বাংলাদেশই নয়, সারাবিশ্বের অভাবী মানুষের দুঃখ-দারিদ্র্য নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখবে এবং অনুসরণীয় মাইলফলক হিসেবে স্বীকৃত হবে।
শিক্ষক নূরই মুহাম্মদ বলেন, মুক্তিআন্দোলন-এর এই অনুষ্ঠানে থাকতে পেরে আমার খুবই ভাল লাগছে। দরিদ্র মানুষের মধ্যে এই নিঃসার্থ ছাগলদান অনুষ্ঠান আমাদের মনুষত্বকে মর্যাদাবান করেছে। মানুষের প্রতি আমাদের দায়বোধ উষ্কে দিয়েছে। আমি আশা করি মানুষ এ ধরনের পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানাবে।
মো: নুরুল ইসলাম বলেন, মুক্তিআন্দোলনের এই ছাগলদান অনুষ্ঠানের কথা প্রথম যখন শুনি ভেবেছিলাম, এটি বোধ হয় কোনো সরকারি পদক্ষেপ কিন্তু এখন দেখছি না এটি সচেতন জনগোষ্ঠির হৃদয়নিংড়ানো ভালোবাসার প্রকাশ, গণমানুষের উদ্যোগ। আমি চাই মুক্তিআন্দোলন-এর এই উদ্যোগ উত্তরোত্তর আরো সমৃদ্ধ হোক, এগিয়ে যাক।
মো: ফিরোজ আলী বলেন, আমি প্রথম ভেবেছিলাম মুক্তিআন্দোলন বোধ হয় কোনো এনজিও, আমার ভিতরে ভিতরে রাগও হচ্ছিল কিন্তু পরে জানতে পারলাম মুক্তিআন্দোলন আমাদেরই মত মানুষের অব্যক্ত আকাক্সক্ষার প্রতিফলন। এভাবে এ দেশের প্রতিটি মানুষ যদি নিজ নিজ অবস্থান থেকে সাধ্যমত কর্মসূচি গ্রহণ করে তবে এ দেশ একদিন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বি হবেই।
মো: লুৎফর রহমান বলেন, আমি বেনজীন ভাইদের পূর্ব থেকে জানি, ফলে এটা যে কোনো সরকারি অনুদান বা এনজিওদের টাকায় হচ্ছে না সেদিক থেকে নিশ্চিত ছিলাম। কিন্তু পুরোপুরি জানতাম না যে কিভাবে এটি বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে। এখন আমি মুগ্ধ। এ ধরনের কাজে আমাদের সকলের অংশগ্রহণ করা উচিৎ। আমি কথা দিচ্ছি আগামী কোরবানীর সময় আমিও মুক্তিআন্দোলনের সাথে একাত্ম হয়ে একটি হেলন (বকরী) ছাগল গরীবকে দান করব। আমি মুক্তিআন্দোলনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এই ধরনের পরীক্ষামূলক পদক্ষেপ আমার ইউনিয়ন আরবপুর-এ গ্রহণ করার জন্য। আমি চাই মুক্তিআন্দোলন এগিয়ে যাক। আমরা আছি তাদের সাথে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন