বুধবার, ৫ অক্টোবর, ২০১১

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর অসতর্ক মুহূর্তের বক্তব্য জাতিবিভক্তকারীদের সহায়তা করবে


‘বঙ্গবীর’ ও ‘বীর উত্তম’ খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকী যখন থেকে পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লেখা শুরু করেন তখন থেকেই তাঁর লেখা আমি আগ্রহ সহকারে পড়ার চেষ্টা করি। তাঁর লেখার প্রতি এই আগ্রহ প্রধানত দুই কারণে। প্রথমত: দেশের বামবিপ্লবী মুক্তিযোদ্ধাদের বাদে কাদের সিদ্দিকীই হলেন দু’দুটো বড় খেতাব পাওয়া একমাত্র মুক্তিযুদ্ধের অধিনায়ক, যিনি একাত্তরে ভারতে না গিয়ে তাঁর বাহিনী (কাদেরীয়া বাহিনী) নিয়ে দেশের মাটিতে থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে অসম সাহস ও বীরত্বের সাথে লড়াই করে বিরল দেশপ্রেমের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
দ্বিতীয়ত: মুক্তিযুদ্ধ ও তাঁর পূর্বাপর সময়ের অনেক জানা-অজানা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার তিনি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ স্বাক্ষী এবং সেসব ঘটনা সরাসরি জনসমক্ষে প্রকাশ করার সততা ও সাহস তিনি রাখেন। ইতিমধ্যে লেখালেখি ও বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রকাশ করে পাঠক-শ্রোতাদের যথেষ্ট প্রশংসাও কুড়িয়েছেন তিনি।
সকলের প্রিয়ভাজন সেই বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী অতিসম্প্রতি একটি দৈনিকে প্রকাশিত এক কলামে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ের কিছু স্পর্শকাতর ঘটনা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ভিন্নমাত্রিক এক মূল্যায়ন প্রকাশ করে শুধু পাঠকদের বিশেষ দৃষ্টিআকর্ষণই করেননি, বরং নতুন করে এক সাংঘাতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। জনাব কাদের সিদ্দিকী লিখেছেন, “১৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ পর্যন্ত যারা ঢাকায় থেকে পাকিস্তানের সেবা করেছেন, তারা ১৪ ডিসেম্বর রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে হানাদারদের হাতে জীবন দিয়ে সবাই শহীদ বুদ্ধিজীবী হয়ে গেছেন। শহীদ বুদ্ধিজীবী, তাদের এতো বুদ্ধিই যদি থাকতো তাহলে তারা ঢাকায় থাকলেন কেন? পাকিস্তানিদের বেতন নিয়ে জীবিকানির্বাহ করলেন কেন? শহীদ বুদ্ধিজীবীরা ডিসেম্বর মাসেও পাকিস্তান সরকারের বেতন নিলেন কেন? তাই ১৪ ডিসেম্বরে হানাদারদের হাতে নিহত বুদ্ধিজীবী, আর হানাদারদের বিরুদ্ধে কাজ করতে গিয়ে ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে জীবন দেয়া শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আমি অন্তত: একই রকম সম্মান করতে পারি না।” (সূত্র : দৈনিক আমার দেশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১১)।
জনাব সিদ্দিকী যদি ১৪ ডিসেম্বরে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের কটাক্ষ করে তাঁর বক্তব্য এখানেই শেষ করতেন তাহলে তাঁর লেখার পিঠে আমার লেখালেখির জরুরি কোনো প্রয়োজন পড়তো না। কাদের সিদ্দিকী অত:পর লিখেছেন - “১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বরে রাজাকার-আলবদর এবং পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে ঢাকায় যারা নিহত হয়েছেন তারা দালাল বুদ্ধিজীবী।” (সূত্র : প্রাগুক্ত)।
একাত্তরের ২৫ মার্চসহ মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস যুদ্ধ করে এবং হানাদারদের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে কাজ করে শহীদ হওয়া বুদ্ধিজীবী আর ৯ মাস ঢাকায় থেকে সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধ না করে চাকরিবাকরি করে ১৪ ডিসেম্বরে রায়েরবাজারের বধ্যভূমিতে হানাদারদের হাতে শহীদ হওয়া বুদ্ধিজীবী Ñ এই দুই ধরনের বুদ্ধিজীবীদের একই রকম সম্মান করতে পারেন না বলে কাদের সিদ্দিকী যে অভিমত ব্যক্ত করেছেন তার সাথে আমরা দ্বিমত পোষণ করি না। আমরা এটাও মানি, শত্রুবাহিনীর হাতে শহীদ সকলেই একই ধরনের মর্যাদা পেতে পারেন না। এ জন্যই তো কেউ বীরশ্রেষ্ঠ হন, কেউ বীর উত্তম হন। কিন্তু একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর হানাদারদের হাতে ঢাকায় যারা শহীদ হয়েছেন তাঁরা ‘দালাল বুদ্ধিজীবী’ - এ ধরনের বক্তব্য শুধু বিভ্রান্তকরই নয়, ঘোরতর আপত্তিকরও বটে। কাদের সিদ্দিকীর মতানুসারে ১৪ ডিসেম্বরে ঢাকায় শহীদ বুদ্ধিজীবীরা যদি ‘দালাল বুদ্ধিজীবী’ হন, তাহলে একাত্তরের ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক অন্যান্য যেসব বুদ্ধিজীবীরা চাকরি-বাকরি-ব্যবসা নিয়ে ঢাকায় অবস্থান করেছেন, অথচ হানাদারদের হাতে নিহত হননি, তারা তো সকলেই হানাদার বাহিনীর বিশ্বস্ত দোসর হয়ে যান, সাক্ষাৎ কোলাবরেটর হয়ে যান। তাই নয় কি?
মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকায় থাকলেই এবং চাকরি-বাকরি করলেই যদি বুদ্ধিজীবীরা ‘দালাল বুদ্ধিজীবী’ হয়ে যান, তাহলে জনাব কাদের সিদ্দিকীর ‘ভগ্নি’ বঙ্গবন্ধু কন্যা ও আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে না গিয়ে স্বামী-সন্তান নিয়ে ঢাকায়ই অবস্থান করেছিলেন। তাঁর বিজ্ঞানী-বুদ্ধিজীবী স্বামী ড. ওয়াজেদও তো চাকরি-বাকরি নিয়ে ঢাকায়ই অবস্থান করেছিলেন। হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদররা তাঁদের কেশও স্পর্শ করেনি। তাহলেই কি তাঁরা দালাল বুদ্ধিজীবী হয়ে গিয়েছিলেন?
জনাব কাদের সিদ্দিকী একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বরে রায়েরবাজারের বধ্যভূমিতে নিহত শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শহিদী মর্যাদা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলে যে নতুন বিতর্কের অবতারণা করলেন, সেটি যে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে পুরনো অনেক ‘মতলবি’ বিতর্ককে নতুন করে উস্কে দিতে পারে তা কি তিনি একবারও চিন্তা করেছেন? কাদের সিদ্দিকীর নিশ্চয়ই জানা থাকার কথা Ñ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার একচ্ছত্র দাবিদার গোষ্ঠীর এক অংশ প্রচ্ছন্নভাবে এরকম একটি ধারণা পোষণ করেন যে, একাত্তরে যারা ভারতে যায়নি এবং ভারতে ট্রেনিং নিয়ে ভারতীয় বাহিনীর তত্ত্বাবধানে মুক্তিযুদ্ধ করেনি  (যেমন বামপন্থীদের একটি বড় অংশ ভারতে না গিয়ে দেশের মাটিতে থেকেই জনগণের ওপর নির্ভর করে এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন) তারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নন। এই শ্রেণীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারীরা তাদের কথাবার্তা ও লেখালেখিতে মুক্তিযুদ্ধে বামবিপ্লবীদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা স্বীকারই করতে চান না।
তাছাড়া একাত্তরে ভারতে না গিয়ে দেশের মাটিতে থেকে ভারতীয় বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে যারা স্বাধীনভাবে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন তারা যদি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা না হন, তাহলে তো স্বয়ং ‘বাঘা সিদ্দিকীও’ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম লেখাতে পারেন না! বর্তমান সরকারের আমলে বঙ্গবন্ধুর পাশে নিজের ছবি যাদুঘর থেকে সরিয়ে ফেলার কারণে তিনি (কাদের সিদ্দিকী) বুকে বড় আঘাত পেয়েছেন বলে তাঁর লেখায় উল্লেখ করেছেন। এই ঘটনাটি প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের তালিকা থেকে তার নাম বাদ পড়ার আলামত কিনা কে জানে? আবার একাত্তরে ভারতে না গেলেও ’৭৫-এ মুজিব হত্যাকান্ডের পর ভারতে আশ্রয় নিয়ে এবং ভারত সরকার ও ভারতীয় বাহিনীর তত্ত্বাবধানে নতুন করে ‘মুক্তিযুদ্ধের’ মহড়ার মাধ্যমে একাত্তরের ‘পাপের প্রায়শ্চিত্ত’ করার কারণেই এখনো পর্যন্ত তাঁর ‘বঙ্গবীর’ ও ‘বীর উত্তম’ খেতাব বহাল রয়েছে কি না, তাই বা কে জানে?
দেশের অভ্যন্তরে কারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা, কারা দ্বিতীয়-তৃতীয় শ্রেণীর মুক্তিযোদ্ধা, কারা পাকিস্তানের দালাল এবং কারা যুদ্ধাপরাধী এসব বিতর্ককে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে অতিশয় বাড়াবাড়ির পর্যায়ে ঠেলে নেওয়ার একটা প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়ে এসেছে একাত্তরের পর থেকেই। এই অতি বাড়িবাড়ি হচ্ছে এক ধরনের আত্মঘাতি প্রবণতা। এরকম আত্মঘাতি প্রবণতার কারণেই অনেক মুক্তিযোদ্ধা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ‘পাকিস্তানের দালালে’ পরিণত হয়েছেন। স্বাধীনতার সপক্ষ-বিপক্ষ শক্তির ধোয়া তুলে সমস্ত জাতিকে দুইভাগে বিভক্ত করে ফেলা হয়েছে। এমনকি দেশের অর্ধেক মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তির সারিতে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এরকম পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক জীবনে পোড়খাওয়া এবং প্রাজ্ঞ-অভিজ্ঞ কাদের সিদ্দিকীর সম্ভবত অসতর্ক মুহূর্তের এই লেখাটি জাতিবিভক্তকারীদেরকেই সহায়তা করবে বলে আমরা মনে করি।
জনাব সিদ্দিকী একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বরে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শহিদী মর্যাদা নিয়ে যখন বিতর্ক তুলেছেন, তখন বিতর্কের পিঠে আরো অনেক গুরুতর বিতর্ক চলে আসে। কাদের সিদ্দিকীর স্মরণে আছে কি না জানি না Ñ একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বরে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রকৃত ঘাতক পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী বা রাজাকার-আলবদরা ছিল, না অন্য কোনো নেপথ্য শক্তি ছিল, তা নিয়ে অনুচ্চ কণ্ঠে একটি বিতর্ক জন্ম নিয়েছিল একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরের অব্যবহিত পরেই। প্রথমে এই বিতর্কের সূত্রপাত ঘটেছিল ১৬ ডিসেম্বরের পূর্বমুহূর্তে ঢাকায় বিশিষ্ট লেখক-বুদ্ধিজীবী শহিদুল্লাহ কায়সারের হত্যাকান্ড নিয়ে এবং ঢাকার মিরপুরে তাঁর সন্ধান করতে গিয়ে তাঁর ভাই প্রখ্যাত লেখক-বুদ্ধিজীবী ও চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে। সে সময় বাজারে প্রচার ছিল (এখনো আছে) Ñ ভারত নিয়ন্ত্রিত ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের বহু অজানা ও বিতর্কিত অধ্যায় এবং গোপন তথ্য নিয়ে জহির রায়হান একটি ডকুমেন্টারী তৈরি শুরু করেছিলেন এবং জানা যায়, সে কাজে শহিদুল্লাহ কায়সারেরও অনুপ্রেরণা ছিল। সে সময় বাজারে এমন কথাও চাওর ছিল যে, এ দু’জন দিকপাল অকুতোভয় দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবীকে পথের কাঁটা মনে করে ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে একশ্রেণীর মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারাই তাঁদের ওপর হত্যাকান্ডটি ঘটে। বলাবাহুল্য, ১৪ ডিসেম্বরে যেসব বুদ্ধিজীবীদের সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছিল তাঁদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন শহিদুল্লাহ কায়সার ও জহির রায়হানের মতোই নির্ভীক দেশপ্রেমিক, যাঁরা মুক্তিযুদ্ধের ওপর ভারতীয় বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ মনেপ্রাণে মেনে নিতে পারেননি। অনেক সুযোগ থাকার পরও তাঁরা ভারতে যাননি। ধারণা করা হয়, এইসব স্বাধীনচেতা শক্তিমান বুদ্ধিজীবীরা জীবিত থাকলে একাত্তর-পরবর্তীকালে দিল্লির আধিপত্যবাদী আচরণের বিরুদ্ধে তাঁরা বাধা হয়ে উঠতে পারেন। এ কারণে তাঁরা ছিলেন ভারতীয় আধিপত্যবাদী শক্তি ও তাদের এ দেশীয় খাস দালালদের ভবিষ্যৎ পথের কাঁটা। আরো  ধারণা করা হয়, একারণেই তাঁদের ওপর এই হত্যাকান্ডটি ঘটানো হয়েছিল ভারতীয় হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক। এটি কোনো নতুন তথ্য নয়। অনেকেই জানেন, এই ধরনের একটি প্রচারণা অনুচ্চ কণ্ঠে হলেও বহুলভাবে প্রচারিত ছিল ৭২-৭৩ সালে। তাছাড়া জনাব কাদের সিদ্দিকী, ১৪ ডিসেম্বরে নিহত যেসব বুদ্ধিজীবীরা ঢাকায় অবস্থান করেছেন, আর সে কারণে জনাব সিদ্দিকী যাঁদেরকে ‘দালাল বুদ্ধিজীবী’ বলেছেন - তিনিই আবার সেই ‘দালাল বুদ্ধিজীবীরা’ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বা তাদের দোসর রাজাকার-আলবদরদের হাতে নিহত হয়েছেন এ কথা বলেন কোন যুক্তিতে?
মুক্তিযুদ্ধের চল্লিশ বছর পর আজ বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী যখন শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ‘দালাল বুদ্ধিজীবী’ বলে আখ্যায়িত করেন, তখন একাত্তরের অক্টোবরে ভারত সরকারের সাথে প্রবাসী সরকারের স্বাক্ষরিত ‘৭ দফা গোপন চুক্তি’ (এ্যাগ্রিমেন্ট)-এর কথা আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়, যেখানে বলা ছিলÑ“যারা সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধ করেছে, শুধু তারাই প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে নিয়োজিত থাকতে পারবে, বাকিদের চাকিরচ্যুত করা হবে, আর সেই শূন্য জায়গা পূরণ করবে ভারতীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।” (হুমায়ূন রশীদ চৌধুরীর সাক্ষাৎকার : সূত্র : রইসউদ্দিন আরিফ : বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিকথা : পরিশিষ্টি-২ : পাঠক সমাবেশ : পৃষ্ঠা-২৭১)।
সে হিসেবে মুনির চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, সিরাজউদ্দিন হোসেন, জিসি দেব, শহিদুল্লাহ কায়সার ও জহির রায়হানের মতো স্বাধীনচেতা বুদ্ধিজীবীদেরকে (কাদের সিদ্দিকী যাঁদেরকে দালাল বুদ্ধিজীবী বলেছেন তাঁদেরকে) চাকরিচ্যুত করার বদলে দুনিয়া থেকে চিরতরে সরিয়ে দিয়ে তাঁদের শূন্যস্থান ভারতীয় কর্মকর্তাদের দিয়ে না হোক, অন্তত: দিল্লির হান্ড্রেট পার্সেন্ট অনুগত বুদ্ধিজীবীদের দিয়েও যদি পূরণ করা হয়ে থাকে, তাতে বিস্মিত হওয়ার কোনো কারণ আছে বলে মনে হয় না। ২০১১ সালের বাংলাদেশ সে কথাই প্রমাণ করে না কি?
সবশেষে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে ধন্যবাদ জানাই, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু অধ্যায় নতুন করে জনসমক্ষে তোলার জন্য। আমরা এসবের ওপর বিতর্কের অবতারণা করছি ইতিহাস খোলাসা করার জন্য। ইতিহাস থেকে শিক্ষাগ্রহণের মধ্য দিয়ে সমস্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে নতুন ধরনের আন্দোলনের মাধ্যমে ভূখন্ডের জনগণের অসমাপ্ত মুক্তিযুদ্ধ সম্পন্ন করার জন্য।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন